স্বদেশ ডেস্ক:
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে সর্বশেষ কর বর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সনদ জমা দিতে হবে, অন্যথায় নতুন করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা যাবে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এমন নির্দেশনার পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। পুরনো বিনিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে বিনিয়োগ করতে না পারায় নিট বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এতে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুন শেষে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। আর বিদায়ী অর্থবছরে বিনিয়োগ কমেছে সাড়ে ৫২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের করের আওতায় নিয়ে আসতে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল সনদ জমা দান বাধ্যতামূলক করা হয়। আগে টিআইএন জমা দিলেই বিনিয়োগ করা যেত। অনেকে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন খুলতেন, কিন্তু বছর শেষে রিটার্ন জমা দিতেন না। নতুন বিনিয়োগে টিআইএন সনদ জমা বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা রিটার্ন জমা দেন না তাদের নতুন বিনিয়োগ এর প্রভাবে কমে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত জুনে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ১ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরের জুনে বিনিয়োগ হয়েছিল ৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুনে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। অপর দিকে বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে সাড়ে ৫২ শতাংশ।
এক দিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে না পারায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করছে, অপর দিকে সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাচ্ছে। এই নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদায়ী অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে একই সময় নেয়া হয়েছিল ১৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। ১১ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি মাত্রায় ঋণ নেয়ার কারণ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১১ মাসে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ঋণ নেয়া হয়েছে ২২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে নেয়া হয়েছিল ৩৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ কমেছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
ব্যাংকবহির্ভূত খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই রয়েছে সঞ্চয়পত্র। বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটেও এটি অপরিবর্তিত রাখা হয়। কিন্তু বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে মাত্র ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, যেখানে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ঘাটতি ছিল।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সহজ করা হলে অর্থাৎ রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা না হলে এ খাতে বিনিয়োগ আবার বেড়ে যেত। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আমানত আর ঝুঁকিপূর্ণ খাতে যেত না, পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই কমে যেত। এতে বাড়ত বেসরকারি বিনিয়োগ।